দেবী কালী



শক্তি আছে। পৃথিবীতে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যিনি শক্তিকে অস্বীকার করেন বা বলেন শক্তি নেই। আবার এও বলা যায় শক্তি আছে। আমরা যা কিছু দেখছি তা সবই শক্তির কাজ। আমাদের দর্শন শক্তি আছে বলেই দেখছি। আমাদের চলত শক্তি থাকলেই চলতে পারি, শ্রবণ শক্তি থাকলেই শুনতে পাই। আমাদের সকল কর্মকাণ্ডে শক্তির অভাব হলে বন্ধ হয়ে যাবে। আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শক্তির ওপর নির্ভরশীল। শক্তিকে বিভিন্ন রূপে ব্যবহার করেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা এগিয়ে চলেছে। শক্তি ছাড়া বিজ্ঞান চলতে পারে না, সৌরজগত চলতে পারে না, প্রাণী জগতের অস্তিত্ব তো কোন ছাড়। তাহলে এই শক্তি কি জড় না প্রাণময়? বিশ্বব্যাপী শক্তি কীভাবে আছে। তা ধারণা হলে বলা যেতো শক্তি জড় না প্রাণময়। শ্রী শ্রী চণ্ডী বলেছেন শক্তির অবস্থানের কথা, রূপের কথা। ইচ্ছা শক্তি, ক্রিয়া শক্তি ও জ্ঞান শক্তি এই তিন রূপেই জগত প্রপঞ্চের কাজ তিনি চালাচ্ছেন।

বিজ্ঞান কি এই জড় শক্তি নিয়ে কাজ করছে? বিজ্ঞানের কাজ রূপান্তরিত শক্তি দ্বারা আমাদের দৈনিন্দ কাজে শক্তিকে ব্যবহার করা। আলো জ্বলছে, টিভি চলছে, ফ্রিজ, পাখা,শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র সবই চলছে। বিজ্ঞানীগণ আলো, শব্দ ,রসায়ন , পদার্থ প্রভৃতি শক্তি কে ব্যাবহার করে আমাদের জগতকে উন্নতির চরম অবস্থায় এনে দিয়েছে।

শ্রী শ্রী চণ্ডী এ অবস্থার কথা জানিয়েছেন-” যা দেবী সর্ব ভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে” অর্থাৎ সকল অণু পরমাণুতে আমি চেতন রূপে অবস্থান করছি। তাই শক্তি জড় নয়।

সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় কাজে এই শক্তি কাজ করছে। আমরা শক্তির সৃষ্টি-লীলা দেখেছি, সৃষ্টি ধ্বংস দেখছি। বীজের ধ্বংসের বৃক্ষ, বৃক্ষের ধ্বংসের নতুনের আভাস। এই নতুনের প্রেরণা বা আভাস মাতৃরূপা শক্তির কথা জানিয়ে দেয়। তাই আর্য ঋষিগণ এই শক্তিকে মাতৃরূপে মঙ্গলময়ী রূপে দেখেছেন এবং বলেছেন-” যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপে সংস্থিতা”-অর্থাৎ আমি সকল অণু-পরমাণুতে মাতৃরুপে অবস্থান করছি। তাই শক্তিরূপ কালী মাতার মূর্তির কল্পনা। মানব জীবনে এই মাতৃশক্তির প্রকাশই মানবের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই সনাতন ধর্মে মাতৃ সাধনার বিকাশ ঘটেছে।

মা কালীর ধ্যান:
ওঁ শবারূঢ়াং মহাভীমাং ঘোরদংষ্ট্রাং বরপ্রদাম্।
হাস্যযুক্তাং ত্রিনেত্রাঞ্চ কপালকর্ত্তৃকাকরাম।।
মুক্তকেশী ললজিহ্বাং পিবন্তি রুধিরং মূহু:।
চর্তুবাহুযুতাং দেবীং বরাভয়করাং স্মরেৎ।।

অনুবাদ: শবের ওপর স্থিত মহা ভীমা ভীষণ দশনা বর প্রদান কারিণী, হাস্যে যুক্তা , ত্রিনেত্রা, মুক্ত কেশযুক্তা, লোলায়িত জিহ্বা-মনে হয় যেনও রুধির পান করছেন,চার বাহুযুক্তা দেবী বর-অভয় প্রদান করছেন,সেই দেবীকে নিত্য স্মরণ করি।

পার্বতী, উমা, সতী এবং দুর্গা ধারার সাথে আরেকটি ধারা কালিকা বা কালী ধারা এবং শক্তি সাধনার ধারাও এই কালিকার ধারা। বেদের রাত্রি সুক্তই পরবর্তী কালে কালীর ধারা সৃষ্টি করেছে। আমরা দেব দেবীগণকে বেদের মধ্যে খুঁজে পেতে চাই। শতপথ ব্রাহ্মণ ও ঐতরেয় ব্রাহ্মণে র্নিঋতি দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৈদিক সাহিত্যে কালীর নাম প্রথম পাই মুণ্ডক উপনিষদে। সেখানে কালী যজ্ঞাগ্নির সপ্ত জিহ্বার একটি।
“কালী করালী চ মনোজবা চ”
এখানে কালী আহুতি গ্রহণ কারিণী অগ্নি জিহ্বা মাত্র। মহাভারতেও একাধিক স্থলে কালীর উল্লেখ আছে। সৌপ্তিক পর্বে দেখা যায় অশ্বত্থামা যখন পাণ্ডব শিবিরে গিয়ে নিদ্রিত বীরগণকে হত্যা করছিলেন তখন হন্যমান বীরগণ ভয়ঙ্করী কালী মূর্তি দেখতে পেয়েছিলেন। কালী দাসের “কুমার সম্ভব”- এ মহাদেবের বিবাহ প্রসঙ্গে বরযাত্রা বর্ণনায় মাতৃকাগণের সাথে মহাদেবের বিবাহ যাত্রায় কালী অনুগমন করেছিলেন।

“তাসাঞ্চ পশ্চাৎ কনকপ্রভাং
কালী কপালাভরণা চকাশে।”

মার্কণ্ডেয় চণ্ডীতে চণ্ড মুণ্ড এবং তাদের অনুচরেরা দেবীর নিকটবর্তী হলে দেবী অত্যন্ত কোপ প্রকাশ করলেন। তাঁর ভ্রুকুটিকুটিল কুটিল ললাট থেকে অসিপাশধারিণী করাল বদনা কালী আবির্ভূত হলেন।

এই কালী দেবী-
” বিচিত্র খট্বাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা।
দ্বীপিচর্মপরিধানা শুষ্কমাংসাতিভৈরবা।।”
“অতিবিস্তার বদনা জিহ্ববাললনভীষণা।
নিমগ্নারক্ত নয়না নাদাপূরিত-দিঙ মুখা।।”

অনুবাদ: বিচিত্র নরকঙ্কালধারিণী, নরমালাবিভূষণা ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতি, শুষ্ক মাংস অতিভৈরবা, অতিবিস্তার বদনা, লোল জিহ্বাহেতু ভীষণা কোটরগত রক্তবর্ণ চক্ষুবিশিষ্ট, তাঁর নাদে দিঙমুখ আপূরিত। রক্তবীজ বধের সময়ও দেবী চণ্ডিকা-

“উবাচ কালীং চামুণ্ডে বিস্তরং বদনং কুরু।”
দেবী কালীকে বদন বিস্তার করে রক্তবীজের দেহ নির্গত রক্ত বিন্দু সকল গ্রহণ করতে বললেন।

পুরাণ, উপপুরাণ ও তন্ত্রাদির মধ্যে আমরা কালী বা কালিকার যে বিস্তার বা বির্বতন দেখি তাতে দার্শনিক চিন্তায় শক্তি বিহনে শিবের শবতা প্রাপ্তি তত্ত্ব খুব প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। অসুরের শবারুঢ়া বলেই যে দেবী শিবা রুঢ়া বলে কীর্তিতা বাংলাদেশের শাক্ত পদাবলীর মধ্যে ঐ সত্যটির প্রভাব দেখা যায়। সাধক রাম প্রসাদের কয়েকটি প্রচলিত গানের কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত করছি:
“শিব নয় মায়ের পদতলে ওটা মিথ্যা লোকে বলে।
দৈত্য বেটা ভূমে পড়ে, মা দাঁড়িয়ে তার উপরে।
মায়ের পাদস্পর্শে দানবদেহ
শিবরুপে হয় রণস্থলে।” রাম প্রসাদ

মায়ের পাদস্পর্শে দানব দেহের শিবরুপতা প্রাপ্তির আসল অর্থ হলো শক্তি তত্ত্বের প্রাধান্য। শক্তি-চরণলগ্ন অসুরের শবই তত্ত্ব দৃষ্টিতে শিবে, রূপান্তরিত হয়েছে। শিব মঙ্গলময়। মঙ্গলময়ী কালীর চরণ স্পর্শে অকল্যাণরুপী দানবও কল্যাণকারী শক্তিতে রূপান্তরিত । অন্যকথায় শিব হলেও তিনি বলেছেন-শক্তিহীন শিবও শবে রূপান্তরিত হয়। শিবের উপর স্থাপিত শক্তির তত্ত্বও অভিনব। শিব মঙ্গলময়। তাঁর উপর শক্তির ভিত্তি স্থাপিত হলে শক্তি কখনো অমঙ্গল বা ধ্বংসকারী শক্তিতে পরিণত হন না। শ্রী শ্রী চণ্ডীর বাণী-

” যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:।।”

যে শক্তি সর্বব্যাপী আছে তার চেতনাও আছে। আর্য ঋষিগণ এই চেতনা শক্তিকেই মাতৃরুপে দেখেছেন। রামপ্রসাদ তাই গেয়েছেন-“কুপুত্র যদি হয় মা

কুমাতা নয় কখনো তো”বাংলায় শক্তি সাধনা তাই মাতৃরুপে বন্দনা, সাধনা।

শ্রী শ্রী কালীর রূপ কল্পনায় আর্য ঋষিগণ মানব জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি দেখেছেন। জগত সংসারের ক্রিয়া কলাপ প্রত্যক্ষ করেছেন। রহস্যের জাল থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা করেছেন। জীবন ও মৃত্যু এই দুইয়ের মধ্যে জীব বদ্ধ নয় তাও দেখেছেন। তাই মূর্তি কল্পনায় ঋষিগণের দৃষ্টি ছিল এরূপ।

কালীদেবীর: কালিকায়ৈ শত্রুনাশিন্যৈ স্বাহা।

বিস্তৃত কালো চুল : সনাতন ধর্মের অন্যান্য দেবীগণের মতো শ্রী শ্রী কালিকার চুল স্বল্প নয়। মাথার পেছনে ঢালের মতো করে বিস্তৃতভাবে চুলের অবস্থান। অর্থাৎ তোমার জন্ম রহস্য তোমার কাছে অনুদঘাটিত থাকে। পেছনের রহস্য জানলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে তোমার আকর্ষণ কমে যাবে তাই জন্ম রহস্যা বৃত।

ত্রিনয়ন: তিন চোখ তিনটি আলোর প্রতীক। চন্দ্র সূর্য ও অগ্নি। অন্ধকার বিধ্বংসী তিন শক্তির প্রকাশ। অজ্ঞতা, অজ্ঞানতাস্বরুপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করাই হলো চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির কাজ। তিনটি চোখে তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করেন। কারণ , এই শক্তিই সৃষ্টি-স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তা। সত্য, শিব ও সুন্দরের দর্শন হয় এই চোখের দ্বারা।

জিহ্বা ও দাঁত: রক্ত বর্ণ জিহ্বাকে সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছেন তিনি। অনেকে বলেন মা রক্ত পান করছেন। কথাটি ঠিক নয়। মা কখনও সন্তানের রক্তপান করতে পারেন না। রামপ্রসাদের গানে আছে ” কুপুত্র যদি বা হয় মা, কুমাতা নয় কখনো তো”। এ ছাড়া রক্তপান একটি ক্রোধযুক্ত অবস্থা, নিষ্ঠুর ক্রিয়া। এতে চোখ ও মুখের ভাবের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এখানে মায়ের করুণাঘন স্নেহার্দ্র দৃষ্টি এবং হাসিমাখা মুখমণ্ডল প্রমাণ করে তিনি রক্তপানের মতো কোনো নিষ্ঠুর কাজ করছেন না। জগতবাসীর মঙ্গলের ইংগিত দিচ্ছেন প্রতীক প্রকাশ দ্বারা। রক্তপান করলে দাঁত অবশ্যই রঞ্জিত হবে কিন্তু দাঁত গুলো সব সাদা। লাল রং রজোগুণের প্রতীক, সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিহ্বাকে চেপে রাখা। এতে বলছেন-সত্ত্বগুণের দ্বারা রজোগুণকে দমন করো। রজোগুণ ভোগের গুণ, ঈশ্বর বিমুখ করে। রজোগুণ দমনের জন্য এই প্রতীক। অনেক সময় আমরা কোনো অন্যায় বা মিথ্যাচরণ করলে জিহ্বায় কামড় দিই অর্থাৎ অন্যায় করার স্বীকৃতি।

মুণ্ডমালা: গলায় পঞ্চাশটি মুণ্ড দিয়ে মালা পরানো আছে। পঞ্চাশটি মুণ্ড পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। ১৪ টি স্বরবর্ণের এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ। অক্ষর ব্রহ্ম, তার ক্ষয় নেই, শব্দ ব্রহ্ম, অক্ষরের দ্বারাই শব্দের উৎপত্তি। এর অবস্থান মস্তকে। আমরা মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা দেব বা দেবী স্ততি করি। এই মন্ত্রের অবস্থান মস্তকের তালুতে সহস্রার পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুণ্ড তাঁর গলায়।

চারটি হাত: দক্ষিণ উপর -বরদান বা অভয় দান, দক্ষিণ নিচ-আশ্রয়। বাম উপর -খড়গ, তোমাকে কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত করতে পারি। বাম নিচ-কর্তিত মুণ্ড মুষ্টিবদ্ধ অর্থাৎ তোমাকে কর্মবন্ধনও করতে পারি। চারি হাত অভয়, আশ্রয়, কর্মমুক্তি ও কর্মবন্ধন প্রকাশ করছে।

কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা: হাত কর্মের প্রতীক। তোমার সকল কর্মের ফলদাতা আমি।

দেবী উলঙ্গ: বিশ্বব্যাপী শক্তির অবস্থান। শক্তিকে আবরিত করা যায় না। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তাই উলঙ্গ।

দেবীর গায়ের রং কালো: সকল রংয়ের অনুপস্থিতিই কালো। সকল রংয়ের অবস্থান সাদা। শক্তিকে দেখা যায় না। প্রয়োগে তার উপলব্ধি। তাই শক্তির ঘর অন্ধকার। তাঁকে দেখতে হলে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে প্রার্থনা করলে তিনি দয়া করে দর্শন দিতে পারেন। আর্য ঋষিদের তাঁকে দর্শন করার প্রার্থনা হলো শ্রী শ্রী চণ্ডীর ‘রাত্রিসূক্ত’। কালোতে অন্য যেকোনো রং লাগলে তার কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু সাদাতে কোনো রং লাগলে ঐ রংয়ের পরিবর্তন হতে পারে। শক্তিকে কী রঙে ভক্তগণ দেখতে ভালোবাসেন তা ভক্তের দর্শনের ভাবের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি বর্ণহীন।

পদতলে শিব: দেবীর পায়ের নিচে শিব বা শব। শিব হলে তিনি বলছেন-দেবীর শক্তি ভিন্ন আমি শক্তিহীন। শব হলে তিনি বলেছেন-প্রতিটি মানুষেরই ক্ষয় আছে। দৈনন্দিন ক্ষয় পূর্ণতা পায় ঘুমের মাধ্যমে। ঋষিগণ বলেছেন-এই ঘুমই মায়ের কোলে অবস্থান। দুরন্ত পরিশ্রান্ত শিশু মায়ের একটু স্পর্শেই নতুন শক্তি আহরণ করে আবার ছুটে যায় নতুন উদ্যমে খেলার মাঝে। আমরাও প্রতিদিনের ক্ষম ঘুমের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েই নতুন উদ্যমে আবার কর্মস্থলে ফিরে যাই। এ ছাড়া মানুষের মৃত্যু একটি অবধারিত সত্য। এই মৃত্যুর পর আবার নতুন দেহ নিয়ে ফিরে আসি এই পৃথিবীতে। তাই মায়ের অবস্থান শেষ আশ্রয়স্থল শ্মশানঘাটে। সেখানে মা কোলে তুলে নেন সন্তানকে আবার শক্তি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান।

জীবনের সাথে এই শক্তির খেলা আর্যঋষিগণ তাঁদের জ্ঞানদীপ্ত উপলব্ধি দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছেন। এই সৃষ্টিতে প্রকৃতি-রুপা মাতৃশক্তির রূপ কল্পনা কালী মূর্তিতে। শক্তির আধারভূতা দেবী শ্রী শ্রী কালী মাতা সকলের পরিত্রাণ করুক, সকলের জীবনে কারী মায়ের মূর্তির তাৎপর্য প্রাণবন্ত হোক, কর্মে সাত্ত্বিকটা আসুক-এই প্রার্থনা রাখি।

আর্যঋষিদের দেবদেবী কল্পনায় অধিকাংশ আধ্যাত্মিক বৈদিক, লৌকিক, আঞ্চলিক দেবদেবীর বাহনরূপে পশুপাখির অবস্থান নির্ণয় করেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো দেবী কালিকার ক্ষেত্রে। এখানে দেবীর বাহন রূপে শিবা, শিব,শব কাকে বাহন নিদিষ্ট করেছেন, তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। পূবেই উল্লেখ করেছি দেবীকে শিবারুঢ়া বলতে শিবের উপর অবস্থিত বোঝায়। অপর পক্ষে শিবা শব্দে শৃগাল বোঝায়। এ কারণে অনেক স্থলে মায়ের মূর্তির সাথে শৃগালকেও দেখানো হয়। কিন্তু মায়ের সাথে শৃগালের যুক্ততা য়ুক্তিগ্রাহ্য নয়। শবরুঢ়া বা শিবা রুঢ়া বলতে যাই বলিই শব হয় শক্তি হীনতায় শিব হয় মঙ্গলকারী শক্তিমানতায় । উভয় শক্তির অবস্থান নির্ণয় করে। যে শক্তি সর্বত্র বিরাজিত নানা রূপে কার্যকারিতায় তার বাহন নির্ধারণ না করাই যুক্তিগ্রাহ্য বলে ঋষিগণ এ বিষয়ে দৃষ্টি দেননি।

লেখক প্রয়াত শিব শঙ্কর চক্রবর্ত্তী,

No comments:

Post a Comment